ঈদুল আজহায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত ‘ঘটনা সত্য’ নাটকে সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের হেয় এবং নেতিবাচক ধারণা প্রচারের অভিযোগে অভিনেতা আফরান নিশো ও অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একই মামলার বাদী বশির আল হোসাইন টেলিভিশন টকশোতে বিশেষ চাহিদার মানুষদের নিয়ে ‘নেতিবাচক’ কথা বলায় আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। বুধবার (১১ আগস্ট) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর ছিদ্দিকের আদালতে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রথম মামলায় নিশো ও মেহজাবিন ছাড়াও আসামি করা হয়েছে- বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, নাটকের চিত্রনাট্যকার মঈনুল সানু, পরিচালক রুবেল হাসানকে। আর পরের মামলায় ব্যারিস্টার সুমন ছাড়াও আসামি করা হয়েছে- ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, অনুষ্ঠান পরিকল্পনাকারী জাহিদ নেওয়াজ খান, প্রযোজক রাজু আলিম, উপস্থাপক সোমা ইমলামকে। বাদীপক্ষের আইনজীবী জীবনানন্দ চন্দ্র জয়ন্ত মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার সকালে প্রথম মামলাটি দায়ের করা হয় ‘ঘটনা সত্য’ নামের একটি নাটকে ব্যবহৃত সংলাপ নিয়ে। যেটি চ্যানেল আইয়ের ঈদুল আজহার আয়োজনে ২৩ জুলাই প্রচার করা হয়েছিল। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘ঘটনা সত্য’ নাটকে দেখানো সংলাপে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের বাবা মা ও পরিবারকে ‘ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’ কিছুদিন আগে নাটকটি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ইউটিইউব থেকে এটি সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও অভিনেতা ও অভিনেত্রী দুজন বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। নাটকটিতে আফরান নিশো অভিনয় করেছেন ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার চরিত্রে এবং মেহজাবীন অভিনয় করেছেন কাজের বুয়ার চরিত্রে। নাটকের শেষ দিকে বলা হয়, বাবা-মার পাপের শাস্তি বা কর্মফলের কারণে প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এই সংলাপের পর তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন নাটকের রচয়িতা, পরিচালক, কুশীলবরা। আর দ্বিতীয় মামলাটি করা হয় চ্যানেল আইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠান ‘টু দ্য পয়েন্ট’ এর ১১ জুলাইয়ের পর্ব নিয়ে, যেখানে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের খেলা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘আমার নিজের ছেলেটারে প্রতিবন্ধী বানাইয়া রাইখা আমি এখন আর্জেন্টিনার ছেলে এবং ব্রাজিলের ছেলে নিয়া লাফাচ্ছি। লাফানো ঠিক আছে। আমরা অনেক ছোটবেলা থেকে ম্যারাডোনার ভক্ত, কিন্তু নিজের ছেলেটারে এভাবে প্রতিবন্ধী বানাব?’ বাদীর অভিযোগ, দেশের ফুটবল খেলার মানের অবনতি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতার সঙ্গে তুলনা করে ‘প্রতিবন্ধী বানাইয়া রাইখা’ এবং ‘এভাবে প্রতিবন্ধী বানাব’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যারিস্টার সুমন গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে ‘নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর’ ধারণা দিয়েছেন।